গত তিন বছরে আমার কাছে যতগুলি ইংরেজি শব্দকে বেশ শক্তিশালী মনে হয়েছে “পার্সেপশন” সে তালিকায় প্রথম। আমরা যা শুনি, দেখি, অনুভব করি অর্থাৎ যা কিছু নিজেদের মাঝে ইমপোর্ট করি সেসব কিন্তু নিজের ‘পার্সেপশনের’ ছাকনিতে ছেকেই নিজের মধ্যে নেই। আমরা যখন কিছু পড়ি তখনও আমরা ঐ নিজের ভেতরের পার্সেপশন দিয়ে ছেকেই অত্নস্থ করি এবং স্থান কাল পাত্রভেদে ইমপোর্ট করি।
“ওয়্যারলেস টু ক্যাশলেস” গত ফেব্রুয়ারি থেকে রিডিং লিষ্টে থাকলেও শেষ হলো আজ।
বইটিকে লেখকের অটোবায়োগ্রাফি বলতেই আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করছি। পুরোটাই একটি গল্প, যে গল্পটি খুব ফ্যাক্ট বেইসড, ভিষণ ইনসাইটফুল। “ওয়ারলেস টু ক্যাশলেস” বই না হয়ে কয়েক পর্বের একটি পোডকাষ্ট হতে পারতো। অথবা খুলনা থেকে গোটা সুন্দরবন ঘুড়ে আসার জাহাজে ৪-৫ দিনের একটি আড্ডাও হতে পারতো। কিংবা গ্রান্ড প্যাসিফিক ড্রাইভ থেকে জার্ভিস বে তে একটি লং ড্রাইভের আলাপ হতে পারতো। তবে বই হিসেবে প্রকাশ পেয়ে খানেকটা স্থায়ী দলিল হয়ে গেল যা নিয়ে আমরা অনেক বছর কথা বলতে পারবো।
রেজা ভাইয়ের ২৭ বছরের ক্যারিয়ারের সংক্ষিপ্ত এক বর্ণনা রয়েছে বইয়ে। আমি সবসময়ই একটা কথা বলি যে আমরা ৯০ এর দশকে যারা জন্ম নিয়েছি তারা যে কারনে সবচেয়ে বেশি ব্লেসড সেটি হলো আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ট্রান্সফর্মেশন দেখেছি/দেখছি।রাস্তার মোড়ে লাল বক্সে হলুদ খামে চিঠি পোষ্ট করা জেনারেশনই আমরা ওয়াটসঅ্যাপে টেক্সট পাঠিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে সিন হলো কিনা সেটা খেয়াল করা জেনারেশন!
কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টেলিকমিউনিকেশন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা প্রতিটিই কিন্তু গত ২৫ বছরে বাংলাদেশকে পরিবর্তন করেছে দ্রুততার সাথে। তো এই যে এত এত ট্রান্সফর্মেশন ঘটলো/প্রতিনিয়তই ঘটছে, রেজা ভাইয়ের ক্যারিয়ারের বিউটি হচ্ছে সে প্রায় এই সবগুলি ট্রান্সফর্মেশনের উপাদানের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করেছেন। আর তার সেসব অভিজ্ঞতা নিয়েই “ওয়্যারলেস টু ক্যাশলেস” জার্নি অফ এ মার্কেট গাই।
গ্রামীন সাইবারনেট, গ্রামীনফোন, সিটিসেল, ওয়ারিদ/ এয়ারটেল, বিকাশ, নগদ … চোখ বন্ধ করলেই লোগোগুলি ভেসে আসে চোখের সামনে। বইটিতে একজন ইনসাইডারের চোখে এই কোম্পানিগুলির নান রকম ঘটনা এবং ষ্টাটেজিক এ্যাপ্রোস এবং সেসবরে ফলাফল নিয়ে বলা আছে। প্রচুর এক্সপ্রিয়েন্স, সেখান থেকে লার্নিং এবং ওয়ে ফরোযার্ড নিয়ে কথা বলেছেন রেজা ভাই।
ইউরোপে গত ৪-৫ বছর ধরে হিউম্যান লাইব্রেরি কনসেপ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যেখানে বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ একজন মানুষকে নির্দিষ্ট বিষয়ে আগ্রহী অন্য মানুষেরা কিছু সমেয়র জন্য বুক করতে পারেন/ ধার নিতে পারেন। তাঁর সময় বুক করে আগ্রহীরা তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শোনে, সাফল্য এবং ব্যার্থতার কথা শোনে। আলাপ করতে করতে নিজেদের ওয়ে ফরোয়ার্ড ঠিক করে। অর্থনীতিবীদ ড. আকবর আলি খান স্যার কে এ কারনেই আমার একটি বিশ্ববিদ্যালয় মনে হয়।
বাংলাদেশে এখনো যেহেতু হিউম্যান লাইব্রেরি কনসেপ্টটি শুরু/জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নি সেহেতু দেশে কম করে হলেও এমন আরো ১০টি “ওয়ারলেস টু ক্যাশলেস” বই/দলিল প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন। ফিনটেক ইন্ডাষ্ট্রিতি যেহেতু আমি কাজ করি সেহেতু এই সম্পর্কিত সব কিছুই আমার জন্য যথেষ্ট ওরথি টু রিড ছিল। তবে শেষ ভাগে সেলস এবং ডিষ্ট্রিবিউশন নিয়ে লেখা চ্যাপ্টারটি আমার জন্য খুবই ইনসাইটফুল ছিল।
আমি ইচ্ছে করেই ” ওয়্যারলেস টু ক্যাশলেস” বইয়ের প্রচলিত টাইপ রিভিউ লিখলাম না। যারা ব্যবসায়ের শিক্ষার্থী, যারা স্টার্টআপ নিয়ে আগ্রহী, যারা সেলস এবং ডিষ্ট্রিবিউশনে কাজ করছেন, যারা বিজনেস ষ্ট্রাটেজি নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য বইটি একটি মাষ্ট রিড।
ফিরে আসি “পার্সেপশনে”। আড্ডা না দিলে, না পড়লে, না জানলে আমাদের তো কুয়োর ব্যাঙের মতো পার্সোশন তৈরি হবে। কুয়োর ব্যাঙ মাসাইমারার ‘গ্রেট মাইগ্রেশনে’ অংশ নিতে পারে না!
বইটিতে বেশ কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে বিশেষ করে বাংলা বানানে। আশা রাখছি দ্বীতিয় সংস্করেণে সে দিকগুলি বাদ যাবে।