রাঙ্গামাটির স্মৃতিগুলো সোনালী

November 27, 2020

রাঙ্গামাটি শব্দটা যখন ছোটবেলায় উচ্চারণ করতাম, ভাবতাম, তখন মাটির রং লালচে বলে মনে হতো। সম্ভবত তেমনই মনে হয়ে সবার। তার পরে একটু বড় বেলায় যখন ভাবতাম তখন সবুজ একটা অবয়ব ভেসে আসে। রাঙ্গামাটিতে প্রথম গেলাম গত ১৫ অক্টোবর ২০২০। উইকেন্ডগুলোতে হারিয়ে যেতে ইদানিং ভালোই লাগছে। বিয়েল ভাই সেই ইচ্ছা পূরণ করছে একর পর এক। গত ৬ বছরে বিয়েল ভাইয়ের সাথে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আড্ডা দিয়েছি। যাহোক, হারিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় এবার যাওয়া রাঙ্গামাটি।

 

ঢাকা-চট্টগ্রামের হাইওয়ে আমার মোটামুটি বেশ ভালো রকমের পছন্দের রাস্তা। রাতের লং ড্রাইভ আমি এ রাস্তাতেই বেশি উপভোগ করি। আমরা ড্রাইভ করছি। থামছি। খাচ্ছি। কিছুই না করে বসে থাকছি। এগিয়ে যাচিছ। এভাবে প্রায় মাঝরাতে গিয়ে পৌঁছলাম চট্টগ্রাম। ঐ শহরে আমার পছন্দের জায়গা গুলোর মধ্যে সিআরবি জায়গাটি একটি। মাঝরাতের সিআরবি দেখতে চলে গেলাম। ওখানেই কাটালাম সকাল পর্যন্ত। সকালে শুরু করলাম রাঙ্গামাটির পথে যাত্রা।

১৬ই অক্টোবর সকাল। এবছর এই প্রথম কুয়াশা দেখলাম। শীত টের পেলাম। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটির রাস্তা বেশ সরু। আঁকাবঁাকা সরু রাস্তা ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। পাহাড় ধরে এগিয়ে চলা। কোথাও সুন্দর, কোথাও ভয়ঙ্কর সুন্দর, কোথাও অসম্ভব সুন্দর লাগছে পাহাড়ি রাস্তা। কাঠমুন্ড থেকে পোখরা যাওয়ার রাস্তাটা অনেকটা এরকম। এখানে শুধু পাহাড় ঘেঁসে নদী বয়ে চলছে না। নদীর পানির রঙ নীলাভ না। আমার কাছে মনে হচ্ছিল এই বুঝি বন্য হাতি নেমে আসবে। একটা হরিণ নেমে এসে দাড়াবে। সবচেয়ে বেশি উপভোগ করছিলাম সকালের সূর্যের আলো গাছের পাতার ভেতর দিয়ে রাস্তায় পড়ছিলো। অনেকটা আল্পনার মতো লাগছিল। অসাধারণ।

Previous slide
Next slide

আমরা বেশ কয়েকবার গাড়ি দাড় করালাম। পহাড়ে কুয়াশা আর সকালের আলোর খেলা দেখলাম। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। এভাবে করতে করতে আমরা রাঙ্গামাটি শহরে পৌঁছে গেলাম। বিয়েল ভাই সাথে থাকলে মজা হলো সে অনেক কিছুর সামজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাস জানে এবং যখন যেখানে যাই তখন সেটা আমাকে বলে। এ যাত্রায় রাঙ্গামাটির গল্প শুনছি তার কাছে।

Previous slide
Next slide

শহরে ঢুকে মনে হলো সমতল থেকে অনেক উঁচুতে আছি। শহরের বাড়িঘর, বাজার, মানুষের যাতায়াত দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছি। থামলাম কপ্তাই লেকের ধারে এসে। আমার কাছে তো মস্তবড় নদী মনে হয়েছে এটা। অথবা একটা বিলের মতো। চোখে পড়লো এই শহরে সরকারের প্রায় সব অফিসই রয়েছে এবং অবকাঠামোগুলো বেশ শক্ত পোক্তই মনে হলো। একটা শহরে এতকিছু ঠিক এভাবে থাকবে ভাবিনি। তবে বিয়েল ভাই আবার এসবের পেছনের গল্প বলছিল। আস্তে আস্তে খানেকটা পরিষ্কার হলো।

আমরা পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলে উঠলাম। সকাল তখন ১০টা। নাস্তা করে রুমে ঢুকে পড়লাম। কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রীজের ধারেই মোটেল। সাররাত ড্রাইভ করে বিয়েলভাই টায়ার্ড কিন্ত আমি বেরিয়ে পড়লাম ঝুলন্ত ব্রীজ আর কাপ্তাই লেক দেখতে। কাপ্তাই লেক দেখে বারবারই মনে হচ্ছিল ফেওয়া লেকেরে কথা। পারিন রং একই রকম, দাড়িয়ে তাকা পাহাড়গুলোও প্রায় একই রকম আর ভেসে থাকা নৌকাগুলোও। আনারস আর আমলকি খেলাম। একটু ভিন্ন স্বাদের মনে হলো। করোনাকালীন সময় হলেও বেশ পর্যটকের আনাগোনা চোখে পড়লো।

Previous slide
Next slide

পাহাড়ি এক শহর চারিপাশে এক লেক নাম তার কাপ্তাই। কপ্তাই কেন? ড্রাইভ করতে একটা থ্রীল-থ্রীল ভাব অনুভব হচ্ছিল। হা হা হা। পর্যটন কর্পোরেশনের খাবার দাবার ভালো। বাইরের আনারস-আমলকি-কলা-পেপের সাথে পর্যটনের খাবার বেশ ভালোই লেগেছে আমাদের। আমরা যে রুমটি পেয়েছিলাম তার পেছনেই লেক। খুবই সুন্দর এক ভিউ।

 

বিকাল-সন্ধা-রাত অবধি আমরা শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, অলি গলি রাজপথে ঘুরে বেড়িয়েছি। মানুষ, বাজার, রাস্তাঘাট, রেষ্টুরেন্ট, মানুষের বিনোদন সবকিছুই দেখার চেষ্টা করেছি। লেকের ধারে রাতের নিস্তব্ধতা পরখ করেছি।

Previous slide
Next slide

পরেরদিন সকালে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে শহরটা অরেকটু ঘুরে আমরা চট্টগ্রামের পথে রওনা হলাম। ফেরার পথের পাহাড়ী রাস্তা আরো ভালো লাগছিল। রাস্তায় এক জায়গায় থেমে আমরা স্থানীয়দের সাথে আড্ডা দিলাম, কিছু সবজি আর ফল কিনে বাসার জন্যে গাড়িতে তুললাম।  

Previous slide
Next slide

দুপর ৩টা নাগাদ চলে আসলাম চট্টগ্রাম শহরে। মেজবান খেয়ে ভাবলাম চট্টগ্রাম আসলাম আর প্রিয় নেভালে যাব না? বোট ক্লাবে কফি খাবো না? না কে হ্যঁ করতে রওনা হলাম পতেঙ্গার পথে।

 

আমার চিরচেনা সন্ধার পতেঙ্গা, বোট ক্লাবের কফি ছাড়াও এবার খুঁজে পেয়েছি নতুন এক বন্ধু “জ্যাক” কে। বিয়েল ভাই তার নামকরণ করে এসেছে। কথা দিয়ে এসেছে আমরা ভবিষ্যতে তাকে দেখতে যাব। রাত তখন প্রায় ৯টা। আমরা রওনা হলাম ঢাকার পথে।

 

Previous slide
Next slide

রাঙ্গামাটিতে আমাদের যাওয়া ছিল সবুজ আভার মাঝে পাহাড়ি রাস্তায় গল্প করতে করতে হারিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমরা হারিয়ে গিয়ে খঁুজেছিলাম প্রকৃতিকে। নিস্তব্ধতা আরা পাহাড়ে থাকা এই মানুষগুলোর ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে। রাঙ্গামাটি বলতে এখন আর আমার মাটির রঙ লালছে কিংবা শুধু সবুজ এক আভাই মাথায় ভেসে আসবে না বরং পাহাড়, আর রোদের আলোর সোনালী সব স্মৃতি মাথায় থাকবে বহুকাল। মাথায় থাকবে পাহাড়ী এই মানুষগুলোর জীবনযাত্রা এবং তাদের ইতিহাস ও ঔতিহ্যের কথা। 

প্রকৃতি সত্যি আমাদের সহজ, সরল এবং সুন্দর হবার কথা বলে। বলে কি?

Related Posts

Scroll to Top