‘The Boy Who Harnessed the Wind” শত প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও শুধুমাত্র পরিশ্রম আর একাগ্রতাকে কাজে লাগিয়ে মাঝে মাঝে অসম্ভবকেও যে সম্ভব করে ফেলা যায় তেমনই এক সত্য ঘটনা নিয়ে বানানো হয়েছে সিনেমাটি।
দক্ষিন আফ্রিকার একটি দেশ মালওয়াই। জনসংখ্যা সব মিলিয়ে ১কোটি ১০ লাখের মতো। কৃষি নির্ভর দেশ হলেও ৩য় শিল্প বিপ্লবের আলো সেখানে তখনো গিয়ে পৌঁছায় নি। কৃষিকাজ সিংহভাগই আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল। খড়ার কারনে কৃষককে দূর্ভোগ পোহাতে হয়। না খেয়ে থাকতে হয় বছরের বেশির ভাগ সময়ে। দারিদ্রতার কারনে কৃষকেরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সামর্থ হারিয়ে ফেলেছে। যেহেতু সমাজের বেশিরভাগ মানুষই স্কুলের বেতন দিতে পারে না তাই স্কুলগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। ব্রিটিশ-নাইজেরিয়ান নির্মাতা চিওতেল এজিওফোরের নির্মিত এই সিনেমাটি এমন এক সময়েরই গল্প বলেছে।

দক্ষিন আফ্রিকার দেশ মালওয়াই। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে নিজেদের ভালো মন্দের কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা নিম্ন আয়ের মানুষের দেশ। আবহাওয়া নির্ভর কৃষি কেন্দ্রীক অর্থনীতির দেশ। দূর্নীতিগ্রস্থ গনতান্ত্রিক এক দেশ। এমন এক দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থায় জন্ম নেয় এবং বেড়ে ওঠে ১৫ বছরের এক শিশু যার নাম উইলিয়াম। তার বাব একজন কৃষক। ভুট্টা চাষাবাদ করে সারা বছর চলে তাদের। পরিবারে উইলিয়ামের বড় একবোন, ছোট এক ভাই সহ বাব-মা মিলে মোট পাঁচ সদস্য। উইলিায়ামের বোন স্কুল শেষ করলেও পরের গন্ডিতে পড়াশুনা করতে পারছে না টাকা নেই বলে। উইলিয়াম স্কুলে যাওয়া এক ছাত্র। তবে স্কুলের বেতন না দিতে পারায় তাকে স্কুলে থেকে বের করে দেয়া হয়।

তবে স্কুলে যাওয়ার সুবাদে উইলিয়াম বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হয়। বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবনে তার আগ্রহ খুঁজে পায়। ইলেকট্রনিক্সে তার নিজের অজান্তেই বড় রকম এক আগ্রহ তৈরি হয়ে যায়। বাবার রেডিও খুলে দেখে নেয় কিভাবে চলছে এ যন্ত্র। পুরাতন গড়ির ভাগাড় থেকে যন্ত্রাংশ খুঁজে বের করে বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করে একটা ফ্যান। তার পর সেটা দিয়ে তৈরি করে বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল বের করে ফেলার পরে উইলিয়ামের মাথায় আসে কিভাবে এই বিদ্যুত দিয়ে খড়ার মৌসুমে গ্রামে চাষাবাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করা যায়। বুদ্ধি পেয়ে যায় কিন্ত তার জন্য প্রয়োজন হয় বাবার সাইকেল। তার বাবাকে সে যখন সাইকেল চেয়ে তার এই আইডিয়া পিচ করে প্রথমবার ঝাড়ি খেয়ে চলে আসে। দ্বীতিয়বার সে তার বন্ধুদের নিয়ে যায় বাবার কাছে তাকে বোঝানোর জন্য। তখন সে দলগত ঝাড়ি খায়। হা হা হা।

খুব কষ্টে মা’কে ধরে বাবা’কে রাজি করিয়ে বাবার সাইকেল নিয়ে ওয়ার্কশপে যায়। সাইকেল কেটে তৈরি করা হয় এক যন্ত্র যেটা দিয়ে গ্রামে সেচ কাজে পানির ব্যবস্থা করা হবে।

গ্রামবাসীকে নিয়ে উইলিয়াম তৈরি করে তার উইন্ডমিল । যার মাধ্যমে বিদ্যৃতের সাহাযে্য পানি আসে গ্রামে। চাষাবাদ শুরু হয়। গ্রাম ধীরে ধীরে সবুজ হতে শুরু করে। আনন্দ যেন সবার চোখে মুখে ঘাসফড়িং এর মতো করে লাফালাফি করা শুরু করলো।

পুরো সিনেমাটি সত্য একটি ঘটনার উপরে তৈরি। গল্পের উইলিয়াম এই বিস্ময়কর আবিষ্কারের পরে স্কলারশিা পেয়ে পড়তে চলে যায়। তারপরে সে আফ্রিকান লিডারশীপ একাডেমীতে যোগ দেয় এবং আমেরিকার ডারমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করেন।

কি চমত্কাৎ এক গল্প। প্রতিভা আর প্রয়োজন কখনো কিছুর জন্য থেমে থাকে না। ছোট্ট একটি উদ্ভাবন কতবড় একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে মানুষের জীবনে, একটি কমিউনিটিতে সিনেমাটি সে কথা বলেছে। আর মানুষ সংগবদ্ধ হলে যে সত্যি পৃথিবী বদলে দিতে পারে তার আরেক প্রমান “দ্য বয় হু হারনেসড দ্য উইন্ড”।
