অনুভূতিরা মানচিত্র বোঝে না

April 25, 2020

সিনেমাকে আমার সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার বলে মনে হয়নি কখনো বরং সিনেমা সমাজের কোন এক অবস্থার চিত্র তুলে ধরার অনবদ্য এক মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখে বলেই আমার ধারণা। কাস্মীরে বসবাসকারী মানুষের জীবনের ছোট্ট একটি ঘনাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় নির্মাতা আইজাজ খান এর সিনেমা “হামিদ” দেখলাম গতকাল। আমি সিনেমার মধ্যে একটা গল্প খুুঁজি, একটা বার্তা খুঁজি, গল্প বলার ধরনের মধ্যে ডুবে যাওয়ার চেষ্টা করি। সেদিক থেকে এই সিনেমার গল্প এবং গল্প বলার ধরন অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে।

৭ বছর বয়সী এক ছেলে হামিদ। তাঁর বাব নৌকা বানায় আর মা বাসায় বসে জামা-কাপড় বানানোর কাজ করে। কাস্মীরে প্রতিবছর শতশত বাবা হাঁরিয়ে যায় তার সন্তানের কাছ থেকে। নিখোঁজ হয়ে যায় প্রিয়জন- পরিবারের কাছ থেকে। হামিদের বাবাও একদিন সন্ধায় বাড়ি থেকে বের হয়ে সেই হারিয়ে যাওয়াদের দলে যোগ দেয়। হামিদ তার বাবার জন্য অপেক্ষা করে। রোজ পড়ার টেবিলে, স্কুলে, শোবার ঘরে, মায়ের সাথে আলাপকালে, রাস্তায়, মসজিদে, বন্ধুদের মাঝে, ক্লাসের ফাঁকে বাবার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করে। হামিদের বন্ধুরা বলে তার বাবা আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছে।

হামিদ আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করার পরিকল্পনা করে। এরই মাঝে একদিন সে জানতে পারলো ৭৮৬ আল্লাহর নম্বর। হামিদ নিজের পকেটের এক টাকা আর রাস্তায় ভিক্ষুকের থেকে ৯টাকা নিয়ে মোট ১০টাকা তারা বাবার পুরাতন মোবাইল ফোনে রিফিল করে ৭৮৬ নম্বরে ফোন করা শুরু করে। কিন্ত ফোন তো আর যায় না। একদিন সে নিজে নিজে ৯৭৮৬৭৮৬৭৮৬ নম্বর তৈরি করে ফোন করলে অন্য প্রান্ত থেকে ফোন ধরে ভারতীয় এক সেনা সদস্য।

হামিদ তাকেই আল্লাহ বলে ধরে নেয়। হামিদ তার আল্লাহর সাথে নিয়মিত ফোনে কথা বলে আর তার বাবাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলে। মাঝে মাঝে হামিদ স্থানীয় মুক্তির জন্য হওয়া বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়লেও সে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলতো কেননা তার বাবা তাকে বলেছিলেন এসব থেকে দূরে থাকতে …. অনেকদিন পরে হামিদ একদিন জানতে পারে তাঁর বাবা আর ফিরে আসবে না। হামিদের পৃথিবীতে, বিশ্বাসে অনেক কিছুই নড়চড় হয়ে গেল একথা জানতে পেরে। শান্ত হামিদ এর প্রতিবাদে রাস্তায় গিয়ে সেনা সদস্যদের গাড়িতে একটা ঢিল ছুড়ে দৌঁড়ে চলে যায় পাহাড়ের উপরে। সেখানে গিয়ে সে চিৎকার করে তার আল্লাহর সাথে কথা বলে কেন তার বাবাকে সে ফিরে পেল না। সবকিছু স¦াভাবিক করেত হামিদ তার বাবার নৌকার দোকানে কাজ শুরু করে, বাবার ইচ্ছেমত নৌকায় লাল রঙ করে, মাকে নিয়ে সে নৌকা পানিতে ভাসায়. . .

হামিদ, হামিদের বাবা, হামিদের মা, তার বাবার হাঁরিয়ে যাওয়া, নৌকা ভাসিয়ে জীবনকে জীবনের মতো করেই সামনে এগিয়ে নেয়া এই সবকিছুই কাস্মীরের মানুষদের জীবনের কথা বলেছে। একজন বাবা তার সন্তানের জন্য কতটা জরুরী সেটা তুলে ধরেছে। বাবাদের হাঁরিয়ে যাওয়া যে হামিদদের সমস্ত জীবনের জন্য এক কøান্তি সে কথা বলা হয়েছে।

কাস্মীর নিয়ে আগ্রহ আছে, আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট নিেেয় কাজ করছেন, কিংবা যারা বাবা বা বাবা হবেন তারা “হামিদ” দেখতে পারেন। বেশ কিছু ফাইন্ডিংস পাবেন। তরুণ নির্মাতারা এই সিনেমার সিনেঅটোগ্রাফি দেখতে পারেন। সেখার বেশ কিছু দিক পাবেন।

Related Posts

Scroll to Top