বছর শেষ হোক বইয়ের কথা দিয়ে

March 5, 2020

বছর শেষ হোক বইয়ের কথা দিয়ে! ২০১৭-তে পড়া হয়েছে এবং আমার ভালো লেগেছে এমন ১২টি বইয়ের কথা রইলো এখানে-

১. ডিসকভার ইউর ডেসটিনিঃ রবিন শর্মার লেখা এই বইয়ে জীবনের উদ্দেশ্যে খোঁজার কথা বলা হয়েছে। আমার কাছে বইটা মূল্যবান হয়ে উঠেছে এ কারনে যে বইটি তার পাঠককে পারপাস অব লাইফ নিয়ে ভাবতে বসায়। আসলেই-তো কেন আমরা পৃথিবীতে, কি উদ্দেশ্য বেঁচে থাকার?

২. আদোনিসের নির্বাচিত কবিতাঃ শাহাদাৎ তৈয়বের অনুবাদে সিরায়ার কবি আদোনিসের জীবন দর্শন জেনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। মুসলিম কবিদের ভেতরে আদোনিস আমার প্রিয় হয়ে উঠেছেন। প্রিয় লাইনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে এ’দু লাইন – এখন, এই মুহূর্তে আমি শুধু ভালোবাসি পবিত্র গ্রন্থগুলোকে প্রশ্ন করতে; কোন ছাঁকনিতে দেবতাদের শব্দগুলোকে তোমরা এনেছ ছেঁকে? ঢাকা লিটফেস্ট ২০১৭তে তাকে দেখতে যেতে তার কথা শুনতে না পারার কষ্ট বেরেই চলছে!

৩. দ্য ফাইভ টেম্পেটেশন অব এ সিইওঃ বইটা শুধু সি লেভেলের লিডারদের জন্যই না বরং এম লেভেলের লিডারদের জন্যও সহায়ক। প্যাট্রিক লিঞ্চিওনির মূল বইয়ের অনুবাদ করেছেন মোঃ মারুফ হাসান মানবীর। লেখক বইয়ে এমন ৫টি টেম্পেটেশন নিয়ে কথা বলেছেন যার ফাঁদে পা দিয়ে লিডারেরা সাফল্য ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হন। আর এই বিষয়গুলো আমাকে সমৃদ্ধ করেছে বলে আমার বিশ্বাস।

৪. কনফেশন অব অ্যান ইকোনমিক হিট ম্যানঃ জন পারকিনস এর লেখা মূল বইয়ের অনুবাদ করেছে বণিকবার্তা। কর্পোরেট কালচার আর পুঁজিবাদ নিয়ে যাদের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে এবং যারা এর বিপক্ষ্যে যুক্তি দাঁড় করাতে চান তাদের জন্য বইটি। বইয়ের লেখক আমাকে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে অনুপ্রানীত করেছেন। সেই সাথে কর্পোরেটের সংস্কৃতির ভেতর বাহিরের অনেক চিত্র এঁকেছেন এ বইয়ে।

৫. লিডারশীপ উইশডোমঃ রবিন শর্মার এই বইটি দিয়েই ২০১৭ সালে বই পড়া শুরু করেছিলাম। লিডারশীপের বিভিন্ন বিষয় সে যেভাবে বইয়ে উপস্থাপন করেছেন তাতে মনে হচ্ছে এই বইটা সারা জীবন আমার সাথেই রাখতে হবে। হা হা হা। আমি মিথ্যা বলছি না! এক বা একাধিক টিম নিয়ে যে কোন প্ল্যাটফর্মকে নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্যে কি করে নিয়ে যেতে হয় সেই সব নিয়ে এ-বই।

৬. কবিতা একাত্তরঃ দ্য গ্রেট হেলাল হাফিজ। আর কিছু না বলি। বরং কয়েকটা লাইন লিখে রাখি – ‘‘প্রত্যাবর্তনের পথে কিছু কিছু ‘কষ্টলি অতীত থেকে যায়। কেউ ফেরে, কেউ কেউ কখনো ফেরে না। কেউ ফিরে এসে কিছু পায়, মৌলিক প্রেমিক আর কবি হলে অধিক হারায়।’’

৭. আপস করিনি কখনোই আমি এই হলো ইতিহাসঃ শিমুল মুস্তফা বেছে বেছে এমন সব কবিদের কবিতা নিয়ে এসেছে এ সংকলনে যে আপনি কবিতা পড়তে ভালোবাসলে বইটা ব্যাগে কিংবা অফিসের ডেস্কেই রেখে দেবেন ১২ মাস।

৮. সাম্রাজ্যবাদীদের উচ্চাভিলাষঃ এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নোয়াম চমস্কির সাক্ষাৎকার অবলম্বনে ডেভিড বার্সোমিয়ান এর লেখো মূল বইয়ের বাংলা অনুবাদ করেছেন রফিকুল রনি। নাইন ইলেভেন নাইন ইলেভেন শুনে শুনে আমরা যারা জানতে শুরু করেছি এ সম্পর্কে আবার যারা বিরক্তও হয়ে পড়েছি তারা বইটি পড়তে পারেন। এ বইয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নিন্দাসহ যারা এ ব্যবস্থার ধারক ও বাহক এবং সভ্যতার সংকট সৃষ্টিতে কাজ করেছেন তাদেরকে তীব্র ভাষায় কটুক্তি করেতে একটুও দ্বিধাবোধ করেননি চমস্কি।

৯. ডিমিষ্টিফায়িং সিক্স সিগমাঃ অ্যালন লারসনের লেখা মূল বইয়ের বাংলা অনুবাদ করেছে বণিক বার্তা। উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলো কি করে তাদের ত্রুটি বিচ্যুতি (উৎপাদনে) কমিয়ে আনতে পারেন সে বিষয়ক বই। এই বইটি আমাকে বেশ কিছু তত্বের সাথে পরিচিত করিয়েছে। আমার মাষ্টার অব বিজনেস ডিগ্রিকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে বইটি। যারা এমন সব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তাদের জন্য বইটি পড়া জরুরী বলে আমি মনে করছি।

১০. কনসিউমার বিহাভিওরঃ পন্য বা সেবা কাদের জন্য তৈরি হয়? হ্যঁ এর ভোক্তাদের জন্য। আর সেই ভোক্তদের ভেতর বাহির নিয়ে লেখা এই বই। কানুক,কুমার, ও শীফম্যান লিখেছেন বইটি। আমি এই বইয়ের বিষযগুলোকে মিলিয়ে নিতে পেরেছি সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ভোক্তাদের রুচিবোধে এবং ব্যবহৃত পণ্যের প্রতি তাদের আচরণের যে পরিবর্তন ঘটেছে তার সাথে। যারা ব্রান্ড নিয়ে কাজ করেন তারা বইটি পড়তে পারেন।

১১. শিল্পী স্টুডিওঃ ইশতিয়াক আহমেদের লেখা বই। আমি যখনই পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখনই পড়া শুরু করি এই বইটি। শুধু এ বইটিই না বরং ইশতিয়াক ভাইয়ের লেখা বরাবরই রিফ্রেশ করে আমাকে।

১২. স্ফুলিঙ্গঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের কোন অনুষঙ্গ নিয়ে লিখে যান নি, কেউ বলতে পারবেন? স্ফুলিঙ্গ হচ্ছে তেমন একটি সংকলন যা সারাজীবন বুক পকেটে নিয়ে ঘোরা সম্ভব। আমি ঘুরবোও!

তো আপনি কি পড়লেন বছর জুড়ে?

Related Posts

Scroll to Top