পোখারা এসে যখন পৌঁছলাম তখন বিকালের শুরু। ফেওয়া লেকেরে পাশইে হোটেল নেয়া ছিল। রুমে ঢুকে দেখি আমার ব্যালকনি একবোরইে লেক ঘেঁষা। ফেওয়া আমাকে হাতছানি দিচ্ছিল। ব্যাগ রেখেই বের হয়ে গেলাম। লেকের ধারে গিয়ে মনে হলো একটা সলো ট্যুরের এমন এক চুপচাপ লেকের সাথে দেখা না হলে তা সলো ট্যুর হয়ে উঠবে/ উঠতো না। যদি নিজের সাথে নিজের মুখোমুখি বসতে হয়। যদি আত্নসমালচনায় নিজেকে দাড় করাতে হয় তাহলে এমন নির্জন-নিঃসঙ্গতাই দরকার।
মেঘলাা আকাশ, বিকালের প্রায় শেষ ভাগ, লেকের পানির নিলাভ রঙ, ভেসে থাকা রঙ্গিন নৌকা এসব কিছু একবারে দেখে অনকেদনি পরে আমার একটি ফটো ষ্টোরি করার ইচ্ছে হল। আমি বশ্বিাস করি একটা কাবিতা থেকে কয়কেটা ছবি তৈরি হতে পারে আবার একটা ছবি থেকে অনেকগুলো কবিতা হতে পার।ছবি অার কবিতা মিলে হয় ছবতিা। হুট করইে এই ফটোষ্টোরির টাইটেল ঠিক করলাম “ছবিতায় ফেওয়ার নৌকা”।
ছবি তুলতে তুলতে ভেসে থাকা নৌকাগুলোর সাথে আমি আমার দেখা জীবন আর জীবনরে অনুষঙ্গ হিসেবে হাজার চরত্রিরে মানুষরে মধ্য থেকে এক ধরনরে মানুষের মিল খুঁজে পলোম। ভিষণ একটা মিল!
প্রতিটি মানুষ দেশলাইয়ের কাঠির মতো। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই একটা বারুদ আছে। কারো কারো বারুদ জ্বলে ওঠে কারো কারোটা জ্বলে না। যাদের ভেতরের এই বারুদ জ্বলে উঠেছে তাঁরা চোখ বন্ধ করলেই কিছু মানুষের চেহোরা ভেসে উঠবে চোখের সামনে। যে মানুষগুলো দেশলাইয়ের প্রথম কাঠিটায় ঘসা দিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের চেহারা ভেসে উঠবে। জীবন পথে এটুকো আসার পেছনে যাদের অসামান্য অবদান, যাদের প্রতি আমারা আজন্ম কৃতজ্ঞ তাঁদেও চেহারা ভেসে উঠবে।
ভেসে থাকা রঙিন নৌকার পাল দেখে মনে হলো ঐ মানুষগুলো আমাদেরকে নৌকার মতো করে ভাসিয়ে রেখেছে। নিজে ভাসছে সাথে ভাসিয়ে রেখেছেন আমাদেরকে। নিজে রঙিন হয়ে মূলত রাঙিয়ে তুলছেন আমাদেরকে। পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা সাদা মেঘ মুহূর্তে কালো হয়ে যায়, বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে, বৃষ্টির জলে কখনো কখনো নৌকা ডুবে যায়। আমাদের জীবনের নৌকার মত সেই মানুষদের জীবনও নিশ্চই মশৃন ছিল না কিংবা থাকবে না। ঝড় বৃষ্টিতে কখনো কখনো তাঁরাও ডুবে গিয়েছিল কিংবা ডুবে যাবে কখনো। তাঁদের জীবনেও অনেক আকাঙ্কা ছিল, পূরণ হয়নি, হবেও না হয়তো। তারা নিজেরাও কখনো হারিয়ে যায়। নির্জনতা খোঁজে নিজেকে ফিরে পাবার জন্য। হয়তো তারা কেউ নিজেদের জগতে নায়ক-নায়িকা কিংবা কথিত সফল কেউ নয় কিন্ত আমাদের কাছে নিঃশন্দেহে তারা নায়ক-নায়িকা-সফল। এসব কথা এই মানুষগুলো কখনো আমাদের সামনে নিয়ে আসে নি, আসবেও না হয়তো।
ভালোবাসা মানে এই মানুষদের জন্য কিছু করা। কৃতজ্ঞতা মানে এই মানুষদের জন্য কিছু করা। তারা যেমন আমদের ভেতরের বারুদকে জ্বলতে সহয়াত করেছেন। জীবনের এই এতটা পথ হেঁটে এসে আমাদেরকে এখন তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা, সাহস, শক্তি আর নির্ভরতার কারন হয়ে উঠতে হবে। তবেই না হবে কৃতজ্ঞবোধের প্রকৃত বহিঃপ্রকাশ।
ফেওয়া লেকে ভেসে থাকা নৌকার ছবি রইলো সাথে এই মানুষদের উদ্দেশ্যে বিকালে লেখা একটা কবিতাও রইলো।
ভেসে থাকো, ভাসিয়ে রাখো
রঙিন থাকো, রাঙিয়ে তোলো
পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা সাদা মেঘ কাল হবে হয়তো
বৃষ্টি হবে, ঝুম বৃষ্টি
ডুবে যেও না
ভেসে থাকো, ভাসিয়ে রাখো।
সাদা বকের মতো পাখা মেলে উড়তে পার না,
দুঃখ করো না।
সাদা বককে বেঁচে থাকতে পানির কাছে আসতে হয়
তোমার শুরু-শেষ পানিতেই, সবাইকে উড়তে হয় না।
কখনো ভালোবেসে দলে থাকো
কথনো বা একাকিত্বে নিজেকে খোঁজো
দিগন্তেÍ ভাসো, দিগন্তকে ভাসাও
ভেসে থাকো, ভাসিয়ে রাখো
রঙিন থাকো, রাঙিয়ে তোলো।
-ইসতিয়াক
১৮ই ডিসেম্বর’১৯, ফেওয়া লেক, পোখারা, নেপাল।
চোখ বন্ধ করি। চেহারা গুলো দেখে নেই। আসছে নতুন বছর হোক তাঁদের জন্য কিছু একটা করার মধ্যদিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রথম বছর।