লিগ্যাসি শব্দটাকে এত বেশি অর্থবহ মনে হয়নি এর আগে কখনো। অনেক সময় ব্যবহার করি শব্দটা তবে আজকে এর ব্যবহারে নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে আমার কাছে। লিগ্যাসি কালচারালি হতে পারে, আদর্শে হতে পারে, স্থাবর-অস্থাবরে হতে পারে, বহুভাবেই হতে পারে বা বহন করা যেতে পারে।
কলকাতা শহর তার স্থাপনায় আর সংস্কৃতিতে ভিষণভাবে এক লিগ্যাসি বহন করে যাচ্ছে। আরো অনেক কিছুতেই হয়তো লিগ্যাসি রয়েছে কিন্ত আমার কাছে বিশেষভাবে এ দুটোকে মনে হয়েছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে শুরু করে, শহরের স্থাপনাগুলোতে, রাস্তার দুপাশের রোড লাইট থেকে শুরু করে ট্রাম সব জায়গায়ই লেগে আছে লিগ্যাসি।
একজন আর্কিটেক্ট এর সাথে কথা বলে বুঝলাম। নকশার কতটা ডিটেইলিং আছে শহরের স্থাপনাগুলোতে। চোখে পড়েছে যা তার মধ্যে ট্রেডিশনাল, ক্লাসিকাল, মডার্ন ট্রান্সফর্মেশন ধাঁচের বিল্ডিংই বেশি। বেলফাস্ট সিটি হলের স্থাপত্যশৈলীর আদলে উইলিয়াম এমারসন এর তৈরি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালতো আমাকে বিস্মিত করেছে। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগের তৈরি স্থাপনা। পুরোটাই শ্বেত পাথরে এবং কলকাতায় শ্বেত পাথরের তৈরি এর চেয়ে বড় স্থাপনা আর নেই। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কি, কেন, কিভাবে সেসব না বলি এখানে, গুগল নোস এভরিথিং। সিংহদ্বার শব্দটা লিখেছি অনেকবার, আজ কাছ থেকে দেখলাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ভাস্কর্যগুলোর দিকে। আফ্রোদিতির দেশে নামে একটা বই পড়ে গ্রীক দেবতাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল আজ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কাছ থেকে তাদের দেখলাম বলে মনে হল।
শহরের মোড়ে মোড়ে ভাষ্কর্যগুলোও বহন করছে লিগ্যাসি। একটা শহর তো এমনই হওয়া উচিত। রাস্তাঘাট, দালানকোঠারা সব ভিন্ন ভিন্ন গল্প বলবে। উত্তরাধিকারের কথা বলবে। ইতহিাস মাথায় নিয়ে দাড়িয়ে থাকবে। ৫-১০ বছর পরে পরে ইতিহাস বদলে ফেলবে না!
তাহলে আমাদের লিগ্যসি কি, কোথায়? জানি তো তাই না? রায়ের বাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ কি নিয়ে দাড়িয়ে আছে জানি তো? বিজয় আর ১৬ই ডিসেম্বর একটি শব্দ আরো দুটো সংখ্যা এক হল কি করে, কি জন্য, জানি তো? বুঝি তো? দেশেতো অনেক বড় কথা আমরা আমাদের জন্ম শহরের লিগ্যাসি কি সে প্রশ্ন করেছি কি নিজেদেরকে কখনো? শহর থেকে বেরিয়ে আসলে ব্যক্তি মানুষ এই ‘আমি’র লিগ্যাসি কি, জানি তো, খুঁজি তো? আমরা হ্যাপিনেস খুঁজিতো সবখানে, সবভাবে। নিজেদের লিগ্যাসি, নিজের লিগ্যাসি খুঁজে পাওয়া, অনুভব করা, বহন করা একরকম হ্যাপিনেস। বি হ্যাপি অলয়েজ।
-ইসতিয়াক
১৪ ডিসেম্বর’ ১৯, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল।